মিরিঞ্জা ভ্যালি ভ্রমণ গাইড

মিরিঞ্জা ভ্যালি ভ্রমণ গাইড

ঘন সবুজ পাহাড় জঙ্গল আর শুভ্র সাদা মেঘ যেখানে হাতছানি দিয়ে ডাকে যাবেন নাকি তেমনি একটা মেঘ রাজ্যে?
বাংলাদেশের ভ্রমণ পিয়াসীদের কাছে এই মেঘ বাড়িটি সব সময় খুব পছন্দের একটি ভ্রমণ ডেস্টিনেশন।
আজ আমি আপনাদের সাথে এই অসম্ভব সুন্দর জায়গাটা নিয়ে আলোচনা করবো, কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন আর কি খাবেন?

কিভাবে যাবেন?

সাজেক খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি বান্দরবানের অন্যান্য সব ট্রাভেল স্পট এর পাশাপাশি মেরিনজা ভ্যালি এখন বেশ জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৮৬ কিলোমিটার ও চকরিয়া হতে মাত্র ২৭ কিলোমিটার দূরে লামা উপজেলায় অবস্থিত এই মিরিঞ্জা ভ্যালী।

ঢাকা টু চকোরিয়া

ঢাকা সায়দাবাদ গাবতলী অন্যান্য যেকোন বাসস্টপ থেকে চকরিয়া পর্যন্ত যেতে পারবেন অথবা অথবা ঢাকা থেকে কক্সবাজার রুটে কক্সবাজারগামী যেকোনো বাসে আপনি যেতে পারবেন চকরিয়া পর্যন্ত তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে বাস কন্ট্রাক্টরকে বলে রাখতে হবে যে, যেন আপনাকে চকোরিয়ায় নেমে দেয়। ঢাকা থেকে চকোরিয়া যাওয়া পর্যন্ত আপনার ভাড়া পড়তে পারে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত। তবে যদি আপনি একটু দরদাম করতে পারেন তাহলে হয়তো ভাড়া একটু কমতে পারে। সময় লাগবে মোটামুটি ২:৩০ মিনিট অথবা ৩ ঘন্টা। আপনাকে গাড়ি থেকে নামতে হবে চকরিয়া বাস স্ট্যান্ডে। বাসস্ট্যান্ড থেকে চান্দের গাড়িতে করে মুরুম পাড়া আসতে হবে এক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৮০ টাকা। এখান থেকে পাহাড়ে ২০ মিনিট ট্রাকিং করে আসলেই মিরিঞ্জা ভ্যালি পেয়ে যাবেন।

কখন যাবেন মিরিঞ্জা ভ্যালীতে?

বর্ষাকালের শেষ থেকে শরৎকাল পর্যন্ত প্রায় সারাদিনই পরিষ্কার আকাশে শুভ্র মেঘের খেলা দেখা যায়। পাহাড়ের চূড়া থেকে এই দৃশ্য দেখার অনুভূতির কোন বিকল্প হয় না। তবে এ সময়টাতে পাহাড়ি পথ বেশ পিচ্ছিল থাকে, ট্রেকিং পথ খুব একটা কঠিন না হলেও উষ্ণ মৌসুমের ফলে পুরো যাত্রাটা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই এখানে আসার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে শীতের শুরুতে তথা নভেম্বর মাস। এ সময় কুয়াশার ঘনঘটা তেমন থাকে না, পাহাড়ের উপরের দৃশ্যগুলো ভালোভাবে দেখা যায়। তাই আপনি যদি কখনো মিরিঞ্জা ভ্যালী ভ্রমণের কথা চিন্তা করেন তাহলে অবশ্যই নভেম্বর মাসে আসার চেষ্টা করবেন।

আরও পড়ুন: সিলেটের জাফলং ভ্রমণের সকল তথ্য

কোথায় থাকবেন?

মিরিন্জা ভ্যালীতে রাতে ক্যাপিং করে থাকতে পারবেন অথবা জুম ঘরে থাকতে পারবেন। জুম ঘরে শুধু ভাড়া ২০০০ টাকা, খাবার আলাদা নিজেদের ব্যবস্থা করে নিতে হবে। যদি ১০ জন বা তারও বেশি গিয়ে থাকেন তাহলে জুম ঘর নিয়ে থাকাটাই বেটার হবে। দুপুরের খাবার, সন্ধ্যায় নাস্তা, রাতে বারবিকিউ, পরদিন সকালের নাস্তা, পানি এবং তাবুতে রাতে থাকা সব মিলিয়ে একটা প্যাকেজ নিতে পারবেন, জন প্রতি খরচ পড়বে ৮৫০ টাকা মাত্র।

কি খাবেন?

মিরিঞ্জা ভ্যালীতে ভ্রমণ করতে গিয়ে যেখানে আপনি থাকবেন তার আশেপাশে রয়েছে চিকেন ফ্রাই, বিরিয়ানি সহ নানা পদের খাবারের ব্যবস্থা। কমপ্লেক্স বা রিসোর্ট এর বাইরে থাকার এবং খাবারের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। ট্রেকিং বা আশপাশ ঘুরে দেখার সময় শুকনো খাবার বা পানীয় সঙ্গে রাখবেন। কারণ সেখানে সময় মত সব কিছু পাশে নাও পেতে পারেন।

ভ্রমণকালীন সতর্কতা

  • এই ভ্যালিটি ঘুরতে গেলে অবশ্যই দল বেধে যাওয়া উত্তম।
  • সার্বিক নিরাপত্তার প্রয়োজনে কিছু জায়গায় চেকিং হতে পারে তাই সঙ্গে জাতীয় পরিচয় পত্র বা পেশাগত অথবা ইউনিভার্সিটির পরিচয় পত্র সঙ্গে রাখা উচিত।
  • পাহাড়ের উপর নির্বিঘ্নে চলাফেরা করার জন্য ভালো গ্রিপসহ মজবুত জুতা পড়ে যাওয়া জরুরি।
  • খাবার পানি, শুকনো খাবার টর্চলাইট ও প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম সঙ্গে নিতে হবে। তবে খেয়াল রাখা উচিত যে,কাঁধের ব্যাগ যেন বেশি ভারী না হয়ে যায়।
  • নিকটস্থ পুলিশ স্টেশন ও হাসপাতালের যোগাযোগের নম্বর সংগ্রহে রাখতে হবে।
  • পরিবেশ ময়লা বা দূষিত করা এড়িয়ে চলতে হবে। সঙ্গে খাবার নিয়ে গেলে সমস্ত উচ্ছিষ্ট এবং মোড়ক যেখানে সেখানে না ফেলে যথাস্থানে ফেলা উচিত।
  • আদিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, কোন অবস্থাতেই যেন তাদের সংস্কৃতির প্রতি কোন অযাচিত মনোভাব প্রদর্শন না হয়।

1 Comment

Comments are closed