সাভারের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পাশে বাড়ইপাড়ায় প্রায় ৩৩ একর জমির উপর ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসে নন্দন পার্ক চালু হয়। এই পার্কের মূল আকর্ষণ হলো এর সবুজ পরিবেশ। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হলে সবুজ ঘাসের উপর বসে বিশ্রাম নিতে পারেন। আন্তর্জাতিক মানের রাইড, ভালো খাবারের দোকান এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ বারবার নন্দন পার্কে আসতে মন চায়। পার্কে নিরাপত্তার ভালো ব্যবস্থা আছে এবং কোনো হকার নেই।
নন্দন পার্ক চালু হওয়ার পর থেকেই স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ, পূজা, পহেলা বৈশাখ সহ বিভিন্ন উপলক্ষে কনসার্টের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও কর্পোরেট পিকনিক, সভা, সেমিনার, মিটিং করার সুব্যবস্থা আছে। বিভিন্ন প্যাকেজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।
নন্দন পার্কের বিভিন্ন রাইড
বিদেশি রাইডের সমন্বয়ে নন্দন পার্কটি সাজানো। আকর্ষণীয় রাইডগুলোর মধ্যে রয়েছে কেবল কার, ওয়েভ পুল, জিপ স্লাইড, রক ক্লাইম্বিং, রিপলিং, মুন রেকার, কাটার পিলার, ওয়াটার কোস্টার, আইসল্যান্ড, প্যাডেল বোট। এছাড়া রয়েছে ওয়াটার ওয়ার্ল্ড।
নন্দন পার্কের প্রবেশ মূল্য
এখানে প্রবেশ মূল্য তিনভাবে বিভক্ত। নন্দন পার্কে প্রবেশ মূল্য ৯০ টাকা। পার্কে প্রবেশ মূল্য ও ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের সমস্ত রাইড ব্যবহার ফি ২৫০ টাকা। ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের রাইড ব্যবহার বাদে ১২০ সেমি-এর উপর উচ্চতা সম্পন্নদের পার্কে প্রবেশ ও সব রাইড ১৫০ টাকা। ১৫০ সেমি-এর নিচে উচ্চতা সম্পন্নদের পার্কে প্রবেশ ও সব রাইড ২০০ টাকা এবং ৮০ সেমি-এর নিচে যাদের উচ্চতা, তাদের কোনো ফি প্রদান করতে হয় না। এছাড়া পার্কের ভেতর প্রত্যেকটি রাইডের নিকট টিকিট কাউন্টার রয়েছে। কেউ ইচ্ছে করলে শুধু পার্কের প্রবেশ মূল্য দিয়ে প্রবেশ করার পর ইচ্ছামতো রাইডগুলোতে টিকিট কেটে উঠতে পারবে। রাইডগুলোর ফি ১০-৩০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিস্তারিত জানতে পারবেন এখানে।
খোলা ও বন্ধের সময়সূচি
রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুধুমাত্র শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
আরও পড়ুন: কিভাবে যাবেন আগ্রার তাজমহলে?
কিভাবে যাওয়া যায়?
ঢাকার মতিঝিল থেকে এখানে বাসযোগে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। হানিফ, সুপার ও আজমেরী বাস সার্ভিসযোগে নন্দনে যাতায়াত করা যায়। আবাবিল পরিবহন মতিঝিল থেকে ছেড়ে গুলিস্তান, মগবাজার, মহাখালী, বনানী, উত্তরা, আশুলিয়া ইপিজেড হয়ে যায়।
এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও এখানে আসা যায়। নন্দন পার্কের সামনে প্রায় ১,৫০০ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
নন্দন পার্কে যা যা দেখবেন
আপনি যখন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে নন্দন পার্কে আসবেন, তখন প্রবেশ করার পর সবার প্রথমে আপনি ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। আর যখন আপনি সৌন্দর্যসমৃদ্ধ এই পার্কে হেঁটে হেঁটে সামনে যাবেন, তখন আপনার সামনে একটি বড় টাওয়ার চোখে পড়বে। বলে রাখা ভালো যে, নন্দন পার্কের মধ্যে এই টাওয়ারটি হলো বিশেষ একটি অ্যাডভেঞ্চার জোন।
কেননা, আমাদের দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখানে বিশেষ ধরনের অ্যাডভেঞ্চার জোন তৈরি করা হয়েছে। আর এই জোনের মধ্যে প্রবেশ করার পর আপনি মোট পাঁচ ধরনের রাইড দেখতে পারবেন। সেই রাইডগুলোর নাম নিচে উল্লেখ করা হলো, যেমন:
- অবস্ট্যাকল জোন
- র্যাপলিং
- চ্যালেঞ্জ কোর্স
- জিপ রাইড
- রক ক্লাইম্বিং
আপনি নন্দন পার্কের অ্যাডভেঞ্চার জোনের মধ্যে যেসকল রাইড দেখতে পারবেন, সেই রাইডগুলোর তালিকা উপরে দেওয়া হয়েছে। তো এই রাইডগুলোর মধ্যে যেসকল বৈশিষ্ট্য আছে, এবার আমি আপনাকে সেগুলো জানিয়ে দেব। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক—
অবস্ট্যাকল জোন
যদি আপনার সাথে কোনো ছোট বাচ্চা থাকে এবং সেই বাচ্চাটি যদি রাইড করতে চায়, তাহলে নন্দন পার্কের মধ্যে থাকা অবস্ট্যাকল জোন হবে তাদের জন্য উপভোগ্য একটি রাইড। কেননা, এটি সম্পূর্ণভাবে ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
নন্দন পার্কের র্যাপলিং
যদি আপনি নিয়মিত অন্যান্য পার্কের মধ্যে ভ্রমণ করে থাকেন, তাহলে আপনার একটি বিষয় অবশ্যই জানা থাকবে। সেটি হলো, বর্তমান সময়ে পার্কের মধ্যে র্যাপলিং রাইড খুব আরামদায়ক এবং সহজ একটি রাইড।
তবে আরামদায়ক হওয়ার পাশাপাশি র্যাপলিং রাইড করতে অনেক সাহসেরও প্রয়োজন হয়। কেননা, নন্দন পার্কের মধ্যে থাকা র্যাপলিং রাইডের উচ্চতাও কিন্তু ৪৫ ফুট। আর উক্ত রাইডটি আপনি চমৎকারভাবে উপভোগ করতে পারবেন।
চ্যালেঞ্জ কোর্স
আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা মূলত দুঃসাহসিক সব রাইড করতে পছন্দ করেন। আর আপনিও যদি তাদের মধ্যে একজন হন, তাহলে আপনার জন্য উপযুক্ত একটি রাইড হবে নন্দন পার্কের চ্যালেঞ্জ কোর্স।
এর কারণ হলো, নন্দন পার্কের মধ্যে যে চ্যালেঞ্জ কোর্স রাইড আছে, সেটি প্লাংক পেন্ডুলাম, প্যারালাল রোপ, বার্মা ব্রিজ ও হর্স পেন্ডুলামের মাধ্যমে গঠিত। আর আপনি যখন এখানে রাইড করবেন, তখন দেখবেন যে এখানে থাকা প্রত্যেকটা রাইডের উচ্চতা হলো ১৮ ফুট করে।
আরও পড়ুন: মহামায়া লেক
জিপ রাইড
এই জিপ রাইডের গড় উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। আর এই দীর্ঘতম জিপ রাইড থেকে মোট ৫৫০ ফুট দূরত্বের সমন্বয়ে প্রায় ৪৫ ডিগ্রি স্নোপ যুক্ত আছে, যেখান থেকে প্রায় ১৪ মিলিমিটার স্টিলের ওয়ারের মাধ্যমে আপনাকে ভূমি বা মাটির মধ্যে অবতরণ করতে হবে।
আর যখন আপনি এই দীর্ঘ জিপ রাইড করবেন, তখন আপনি এক অনন্য অনুভূতি অনুভব করতে পারবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, এই রাইডটি আপনার কাছেও অনেক ভালো লাগবে।
রক ক্লাইম্বিং
আপনি যদি রাইডিং করে নিজের সাহসিকতার প্রমাণ করতে চান, তাহলে আপনি নন্দন পার্কে ভ্রমণ করার সময় অবশ্যই রক ক্লাইম্বিং রাইড করতে ভুলবেন না। কেননা, এটি প্রায় ৪৫ ফুট উচ্চতায় এবং মোট ৯০ ডিগ্রি খাড়া একটি টাওয়ারের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে, যাতে করে আপনার মতো রাইডপ্রিয় মানুষগুলো রাইডিংয়ের আসল স্বাদ নিতে পারে।
নন্দন পার্কে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
দেখুন, এটি একটি জনপ্রিয় পার্ক। আর এখানে ঘুরতে আসা দর্শকদের জন্য যথেষ্ট খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। সেইসাথে মানসম্মত হোটেলে আপনি রাত যাপন করতে পারবেন। কেননা, পার্ক কর্তৃপক্ষ থেকে থাকার সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
যেমন: আপনি সেখানে থাকা কাপল বেড ভিলেজ রুমে মাত্র ৬,২০০ টাকায় রাত যাপন করতে পারবেন।
তবে আপনাকে নিজ দায়িত্বে হোটেল যাচাই করে থাকতে হবে। আর আপনি অবশ্যই রাত্রি যাপন করার পূর্বে হোটেলের নিরাপত্তা ও পরিবেশ দেখে নিবেন। আর খাওয়ার পূর্বে খাবারের গুণগত মান বিবেচনা করবেন।
যোগাযোগ
নন্দন পার্ক লিমিটেডের কর্পোরেট অফিস
৯/এ, সোহরাওয়ার্দী অ্যাভিনিউ, বারিধারা, ঢাকা-১২১২।
ফোন: ৯৮৯০২৮৩, ৯৮৯০৯২১, ৯৮৯০৯৪৯।
ওয়েবসাইট: www.nandanpark.com
Pingback: চন্দ্রনাথ পাহাড়, কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কি খাবেন? - Sahojinfo