সিলেটের জাফলং ভ্রমণের সকল তথ্য

জাফলং

জাফলং সিলেট শহর থেকে ৬২ কিমি দূরত্বে অবস্থিত একটি দর্শনীয় স্থান। এটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। জাফলং জিরো পয়েন্টে থাকলে তার সামনে পড়বে ডাউকি ব্রিজ। এর নিচে বয়ে চলেছে পিয়ানি নদী। পাহাড়, পাথুরে নদী আর ঝর্ণা সব মিলে প্রাকৃতিক পরিবেশকে করে তুলেছে আকর্ষণীয়। জাফলংকে বলা হয় প্রকৃতি কন্যা! জাফলংয়ের বিশেষত্ব এখানকার আদিবাসীদের জীবনধারা। পিয়ানি নদী পার হলেই খাসিয়াপুঞ্জি। খাসি ভাষায় পুঞ্জি মানে গ্রাম।

জাফলং কিভাবে যাবেন?

জাফলং যেতে হলে আপনাকে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে চায়ের দেশ সিলেট আসতে হবে। বাস, ট্রেন কিংবা উড়োজাহাজে করে আপনি সিলেট আসতে পারবেন। বাসে এলে ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে সিলেটের বাস ছাড়ে। ইউনিক, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ দেশের সব বড় কোম্পানির বাস আছে সিলেট রুটে। এই রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাসে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা।

আরও পড়ুন: রামসাগর দীঘি, দিনাজপুর

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট

ঢাকা-সিলেট রুটে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। কমলাপুর থেকে সকাল ৬:৪০ মিনিটে পারাবত, দুপুর ১২:০০ টায় জয়ন্তিকা, বিকাল ৪:০০টায় কালনী এবং রাত ৯:৫০ মিনিটে উপবন এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। ট্রেনের ভাড়া পড়বে আসনভেদে জনপ্রতি ২৬৫ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে ৭/৮ ঘণ্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে রাতের উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়া সুবিধাজনক। সারারাত জার্নি করে ভোরে সিলেট পৌঁছানো যায়।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া, বিআরটিসি ও এনা পরিবহনের সিলেট রুটে বাস রয়েছে। ভাড়া ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এবং শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া সিটের শ্রেণিভেদে ১৪৫ থেকে ১২০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১১ ঘণ্টা।

সিলেট থেকে জাফলং

সিলেট থেকে বাস, সিএনজি, লেগুনা বা মাইক্রোবাসে করে আপনি জাফলং যেতে পারবেন। লোকাল বাস ছাড়ে শহরের শিবগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে। ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা। মাইক্রোবাসে গেলে আসা-যাওয়া রিজার্ভ ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা। আর সিএনজি নিলে খরচ পড়বে ১২০০ থেকে ২০০০ টাকা। তাই দলগতভাবে খরচ কম পড়বে। সিলেট থেকে জাফলং যেতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে।

কখন যাবেন জাফলং?

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সারা বছরই ভ্রমণপিপাসুরা এখানে ছুটে আসেন। শীতে এখানে নদীতে পানি কম থাকে বলে হেঁটেই পার হওয়া যায়। আর বর্ষায় নদীতে অনেক স্রোত থাকে। তখন চারপাশে ছড়ানো পাথর, সবুজ পাহাড়, আর মায়াবী ঝর্ণা মিলে জাফলং তার রূপের দুয়ার মেলে দেয়। তাই এক কথায় বলা যায় বর্ষা ও তার পরবর্তী সময়টা জাফলং ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। অর্থাৎ জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জাফলং ভ্রমণ করলে বেশি ভালো লাগবে।

আরও পড়ুন: কান্তজীর মন্দির ভ্রমণ, দিনাজপুর

কোথায় থাকবেন?

জাফলংয়ে রাতে থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় আবার সিলেট শহরে চলে আসতে পারেন। সিলেট শহরে প্রচুর হোটেল রয়েছে। আম্বরখানা, দরগাহ গেট, জিন্দাবাজার —এসব এলাকায় অনেক হোটেল পাওয়া যাবে। এর মধ্যে হোটেল পলাশ ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল হিল টাউন, হোটেল ব্রিটানিয়া, হোটেল সুপ্রিম, হোটেল ডালাস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলো জনপ্রিয় টুরিস্ট হোটেল। এখানে ক্যাটাগরিভেদে ১২০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে রুম পাওয়া যাবে।

বিলাসবহুল হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল রোজ ভিউ কমপ্লেক্স, হোটেল নির্ভানা ইন, হোটেল গ্র্যান্ড প্যালেস, হোটেল নূরজাহান ইত্যাদি। রুম ভাড়া ৫০০০ থেকে ১২০০০ টাকার মধ্যে। সিজন অনুযায়ী রুম ভাড়ায় তারতম্য হয়।

একদম সস্তার মধ্যে সিলেটের দরগাহ গেট এলাকায় অনেকগুলো হোটেল রয়েছে। আপনার সাধ্যমতো হোটেল ভাড়া করতে পারবেন ওখান থেকে।

কি খাবেন, কোথায় খাবেন?

জাফলংয়ে খাওয়ার জন্য বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এছাড়া সিলেট থেকে জাফলং যাওয়ার পথেও একাধিক ভালো মানের রেস্টুরেন্ট পাবেন। চাইলে ওখানে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। জাফলং-এ দুপুরে খাওয়ার খরচ পড়বে জনপ্রতি ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা। মুরগির মাংস, গরুর মাংস, মাছ, ভর্তা ইত্যাদি মেনু পাওয়া যাবে এখানে।

এছাড়া সিলেট শহরে অনেকগুলি বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট আছে। পাঁচ ভাই, পানসী, ভোজন বাড়ি, পালকি—এগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিভিন্ন প্রকার ভর্তার সাথে আপনার পছন্দমতো মেনু পাবেন এখানে। খরচ হবে জনপ্রতি ১০০-২৫০ টাকার মতো। এই রেস্টুরেন্টগুলোতে ২৯ রকমের ভর্তা আছে! চাইলে সকালের নাস্তাও এইসব রেস্টুরেন্টে সেরে নিতে পারবেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

জাফলং ভ্রমণে গেলে কাছাকাছি রয়েছে আরও কয়েকটি দর্শনীয় স্থান দেখতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছে সংগ্রামপুঞ্জি মায়ারি ঝর্ণা। যেটি পিয়াইন নদী পার হয়ে ১৫ কি.মি. হাঁটলেই পাওয়া যাবে। এটি মূলত ভারতের অংশে পড়েছে। তবে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত যেতে পারবেন। এছাড়া অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে খাসিয়া পুঞ্জি, তামাবিল জিরো পয়েন্ট এবং লালাখাল। এছাড়া আছে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, বিছনাকান্দির কাছে পান্থুমাই ঝর্ণাসারি নদীর লালাখাল, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর। এছাড়া যেতে পারেন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টবিছনাকান্দি

জাফলং ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

সিলেট বিভাগের যেকোনো দর্শনীয় স্থান বর্ষাতেই সুন্দর। জাফলং ভ্রমণের সময়ও বর্ষাকাল। তখন নদীতে অনেক স্রোত থাকে। সাঁতার না জানলে নদীতে নামবেন না। সাঁতার জানলেও লাইফ জ্যাকেট পরুন। মনে রাখবেন, দলগতভাবে ভ্রমণ করলে সবসময় খরচ কম পড়বে। জাফলংয়ে অনেক ভারতীয় পণ্যের দোকান পাবেন। বেশিরভাগই নকল, তাই কিছু কিনতে চাইলে সাবধানে কিনতে হবে। আর নৌকা নেওয়ার সময় দরদাম করে নিন। ছুটির দিনে সবকিছুর দাম বেড়ে যায়, তখন ভ্রমণে খরচ বেশি হয়।

3 Comments

Comments are closed