পিআইডি (পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ) হচ্ছে জরায়ু এবং ডিম্বনালীতে জীবাণুর সংক্রমণ। মাঝে মাঝে এটি ডিম্বাশয়কেও আক্রান্ত করতে পারে। পিআইডির একটি কমন কারণ হচ্ছে Chlamydia and gonorrhoea নামক জীবাণুর সংক্রমণ।
এছাড়া আন্যান্য কিছু জীবাণুও এ রোগের কারণ হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যৌনবাহিত রোগের মাধ্যমে এ জীবাণুর সংক্রমণ হয়ে থাকে। গর্ভপাত, জরায়ুর কোনো অপারেশন, অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক ইত্যাদির মাধ্যমেও জীবাণু ভেতরে ঢুকতে পারে। কিছু লক্ষণ দেখে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগে আক্রান্তদের শনাক্ত করা যায়।
সারভিসাইটিস বা জরায়ুর মুখের ঘা কাকে বলে?
মহিলাদের, জরায়ুর মুখ যেখানে যোনির সাথে মিলিত হয়, তাকে সার্ভিক্স বলা হয়। যখন সার্ভিক্স উদ্দীপ্ত হয়, তখন তাকে সারভিসাইটিস বলা হয়। এর অনেক কারণ আছে, এবং উপসর্গগুলি বিভিন্ন মহিলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন।
সারভিসাইটিস সংক্রামক বা অ সংক্রামক হতে পারে এবং এটির চিকিৎসা এর কারণের ওপর নির্ভর করে।
কেন হয়?
প্রায়ই ক্ল্যামাইডিয়া বা গনোরিয়ার মতো যৌনবাহিত সংক্রমণের ফলে সার্ভিসাইটিস হয়। এর বাইরেও কিছু জীবাণুর সংক্রমণে এটি হয়। এর মধ্যে আছে—হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস। অ্যালার্জির কারণেও সার্ভিসাইটিস হতে পারে। কিংবা যোনিপথে থাকা ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে গেলেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঝুঁকিতে কারা?
অনিরাপদ যৌনমিলন এ রোগের অন্যতম একটি কারণ। আবার কোনো একজনের একাধিক সঙ্গী থাকলেও এ রোগ ছড়ায়। আবার আগে থেকে সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড রোগের ইতিহাস থাকলেও পরে সেটা দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন: লিভার ভালো রাখার উপায়
জটিলতা
নারীদের সার্ভিক্স ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসকে জরায়ুতে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। সার্ভিক্স সংক্রমিত হলে তখন জীবাণুগুলো জরায়ুতে গিয়ে সেখানে সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করে।
গনোরিয়া বা ক্ল্যামাইডিয়া দ্বারা সৃষ্ট জরায়ুর প্রদাহ জরায়ুর দেয়াল ও ফ্যালোপিয়ান টিউবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ (পিআইডি) দেখা দিতে পারে। যা নারীদের প্রজনন অঙ্গগুলোর একটি সংক্রমণ। এটির চিকিৎসা করা না হলে প্রজনন সমস্যা হতে পারে।
এটির প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
সারভিসাইটিসের সাধারণ লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি হল:
- যদি মূত্রনালীও আক্রান্ত হয় তবে আক্রান্ত মহিলাটি মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা অথবা জ্বালাভাব অনুভব করতে পারেন।
- যোনিতে চুলকানি অথবা যোনি থেকে রক্তপাত হতে পারে, বিশেষত যৌন সংসর্গের পরে অথবা মাসিক চক্রের মধ্যিখানে (আরো পড়ুন: নিরাপদ যৌন চর্চা)
- অনেক সময়, পেটের যন্ত্রণা দেখা দিতে পারে তার সাথে জ্বর।
- কিছু মহিলার ক্ষেত্রে সারভিসাইটিসের কোন উপসর্গ না থাকতে পারে।
এটির প্রধান কারণগুলি কি কি?
খুব সাধারণভাবে, যৌনবাহিত সংক্রমণের কারণে সার্ভিক্স উদ্দীপ্ত হয়। এই যৌনবাহিত রোগগুলি হল-
- ক্লামিডিয়া
- গনোরিয়া
- হারপিস
অসংক্রামক কারণগুলি হল লেটেক্স অ্যালার্জি এবং ডিউসিং, উভয়ের কারণেই জ্বালাভাব (প্রদাহ) সৃষ্টি হয়।
- ব্যাকটেরিয়াল ভাজিনোসিস হল যোনির ব্যাকটেরিয়া বা রোগজীবাণু দ্বারা সংক্রমণ যা সারভিসাইটিসের কারণও হতে পারে।
- যেসব মহিলা ক্যানসারের জন্য রেডিয়েশন থেরাপি নিচ্ছেন তাদেরও সার্ভিক্সের মধ্যে জ্বালাভাব দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন: থানকুনি পাতার অপকারিতা
কিভাবে এটির নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
এই অবস্থাতে যে সকল পদ্ধতিতে রোগ নির্ণীত হয় সেগুলি হল :
- যদি ডাক্তার সারভিসাইটিস আশঙ্কা করেন তবে শ্রোণী পরিক্ষা করা হয়ে থাকে। রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীর যৌনজীবনের ইতিহাস জানাও গুরুত্বপূর্ণ।
- সংক্রমণের উপস্থিতি প্রমাণের জন্য সার্ভিক্সের তরলের আণুবীক্ষণিক পরীক্ষা প্রয়োজন।
- রক্ত পরীক্ষাও সংক্রমণ শনাক্ত করতে সাহায্য করে। সংক্রমণ হলে, রক্তে শ্বেত রক্তকণিকার বৃদ্ধি (ডাবলিউ বি সি) লক্ষ্য করা যায়।
সারভিসাইটিসের চিকিৎসাগুলি হল:
- যদি সংক্রমণের কারণে প্রদাহ বা জ্বালাভাব দেখা যায়, তবে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।
- যৌন সংসর্গ থেকে দূরে থাকা এবং আপনার সঙ্গীর এসটিডির পরীক্ষাও প্রয়োজনীয়।
- যদি সারভিসাইটিস অ্যালার্জির কারণে হয়, তবে কোন বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না, অ্যালার্জির কারণটিকে দূরীভূত করলেই হবে।
- সার্ভিক্সের জ্বালাভাব উপশম করতে, যোনি এলাকায় শক্তিশালী রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার এড়ানো, যোনি জল দিয়ে পরিষ্কার, এবং অরক্ষিত যৌন সংসর্গ অথবা বহুজনের সাথে যৌন সংসর্গ এড়িয়ে চলা উচিত।