লিভারের অসুখের জন্য আমাদের নানা ভুল অভ্যাস অনেকাংশে দায়ী। বিশেষ করে ভুল খাবার নির্বাচন ও সঠিক উপায়ে না খাওয়া এর মধ্যে অন্যতম। বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, ঠিক সময়ে খাবার না খাওয়া, হাত না ধুয়ে খাওয়ার মতো অভ্যাস থাকলে তা বাদ দিন। সেই সঙ্গে বাদ দিতে হবে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা, ঘুমে অনিয়ম করার মতো অভ্যাসও। কিছু খাবার আছে যেগুলো আপনার লিভার ভালো রাখতে সাহায্য করতে পারবে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক তেমন কতগুল খাবার সম্পর্কে—
লো ফ্যাট ফুডে ‘না’
ফ্যাটি লিভারের সমস্যা এড়াতে অতিরিক্ত মদ্যপান, তেল-মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত ঠিকই, তবে লো ফ্যাট ফুড হতে সাবধান। সুপারমার্কেটে গিয়ে লো ফ্যাট বা ৯৯ শতাংশ লোয়ার ইন ফ্যাট লেখা ফুড কেনা অবিলম্বে ত্যাগ করুন। এই সব খাবার থেকে ফ্যাট বাদ দেওয়া হয় ঠিকই, কিন্তু স্বাদ ধরে রাখতে যোগ করা হয় প্রচুর পরিমাণ চিনি। এতে লিভারের সমস্যা আরও বেড়ে যায়।
স্ট্রেস থাকলে খাবেন না
বোর হলে, এনার্জি কম লাগলে কী করি আমরা? অনেকেই এই সময় খাবার খেয়ে মুড ঠিক করতে চান। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন লিভার সুস্থ রাখতে স্ট্রেসের সময় খাবার ছোঁবেন না। এই সময় হজম ঠিকমতো হয় না।
হার্বাল কেয়ার
শুনতে অদ্ভুত লাগলেও বেশ কিছু গাছের মূল রয়েছে যা লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ড্যানডেলিওন, মিল্ক থিসল বা হলুদের মূল লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
সাপ্লিমেন্ট
প্রোটিন বা ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার সময় সতর্ক থাকুন। এমন সাপ্লিমেন্ট বাছুন যা লিভার ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি লিভার পরিষ্কার রাখে। প্রোটিনের মধ্যে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিডও লিভার পরিষ্কার রাখার জন্য ভালো। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ওষুধ থেকে সাবধান
বেশি কিছু ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। এ সব ওষুধ থেকে দূরে থাকুন। কিছু পেনকিলার, যেমন টাইলেনল বা কোলেস্টেরলের ওষুধ লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে।
আরও পড়ুন: দ্রুত ব্রণ দূর করার উপায়
কফি
চা, কফি খেলে শরীরের ক্ষতি হয় এই কথাটা কতবার শুনেছেন? কফি খাওয়ার কিন্তু অনেক সুফল রয়েছে। গবেষণা জানাচ্ছে, নিয়মিত কফি খেলে লিভারের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্তত ১৪ শতাংশ কমে যায়।
টক্সিন
ত্বকে বিষক্রিয়া লিভারের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। ত্বকের মাধ্যমে বিষ রক্তে শোষিত হয়। তাই স্প্রে, টক্সিন থেকে দূরে থাকুন।
প্ল্যান্ট প্রোটিন
লিভার সুস্থ রাখতে সবচেয়ে বেশি জরুরি সঠিক খাবার বাছা। অ্যানিমাল প্রোটিনের থেকে লিভারের জন্য বেশি ভালো প্ল্যান্ট প্রোটিন। ডাল, সবুজ শাক-সবজি, বাদাম, ফাইবার খান।
ইজি বুজিং
অ্যালকোহল লিভারে টক্সিন জমা করে। ফলে অতিরিক্ত মদ্যপান লিভারের ক্ষতি করে। তবে হালকা অ্যালকোহল শরীরের পক্ষে ভালো।
হেলদি ফ্যাট
ফ্যাট শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই লিভার সুস্থ রাখতে ফ্যাট ডায়েট থেকে একেবারে বাদ দিয়ে দেবেন না। হেলদি ফ্যাট খান। অলিভ, ওয়ালনাট জাতীয় খাবারে হেলদি ফ্যাট থাকে।
অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা
ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। একই সঙ্গে লো ফ্যাট ফুড থেকেও সাবধান থাকতে হবে। কারণ, এসব খাবার থেকে ফ্যাট বাদ দেওয়া হয় ঠিকই, কিন্তু খাবারের স্বাদ ধরে রাখতে প্রচুর পরিমাণ চিনি যোগ করা হয়। এতে লিভারের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
স্ট্রেসের সময় না খাওয়া
মাঝেমধ্যে অনেকের মনে হয়, শরীরে এনার্জি কম লাগছে। ঠিক তখন এনার্জি ফিরে পেতে আমরা খাওয়া-দাওয়া করি, যা একদমই ঠিক নয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, লিভার সুস্থ রাখতে স্ট্রেসের সময় কোনো খাবার খাওয়া যাবে না। কারণ, ওই সময় ঠিকমতো হজম হয় না।
গাছের মূল খাওয়া
লিভারের সমস্যা সমাধানে কিছু কিছু গাছের মূল খুব ভালো কাজ করে। হলুদের মূল লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এজন্য খালি পেটে অনেকে কাঁচা হলুদ খেয়ে থাকেন।
ভিটামিন
প্রোটিন বা ভিটামিন জাতীয় খাবার খাওয়ার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকুন। খাদ্য তালিকায় এমন খাবার রাখুন, যা লিভার ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স, ভিটামিন ‘সি’ লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া প্রোটিনের মধ্যে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিডও লিভার পরিষ্কার রাখার জন্য ভালো কাজ করে। পাশাপাশি ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ওষুধ
এমন কিছু ওষুধ আছে, যেগুলো লিভারের ক্ষতি করে। যেমন—পেনকিলার, টাইলেনল বা কোলেস্টেরলের ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। তাই এসব ওষুধ থেকে দূরে থাকুন।
আরও পড়ুন: মেয়েদের ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট
ওটস
যেসব খাবার ভালো হজমে সাহায্য করে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ওটস। ওটসে থাকে প্রচুর ফাইবার। যেসব খাবার হজম ভালো করে, সেগুলো লিভারের জন্যও ভালো। এছাড়াও ওটসের বিটা গ্লুক্যান লিভারকে প্রদাহ থেকে রক্ষা করে। যাদের ডায়াবেটিস ও স্থূলতার মতো সমস্যা রয়েছে, তারাও নিয়মিত ওটস খেতে পারেন। কারণ এই দুই অসুখের বিরুদ্ধেও লড়াই করে ওটস।
মাছ
ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত মাছ লিভারের জন্য উপকারী। এই ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের নানা রকম প্রদাহ থেকে দূরে রাখে। সেই সঙ্গে ঠিক রাখে উৎসেচকের ক্ষরণও। খাবারের তালিকায় স্যামন ফিশ রাখলে এক্ষেত্রে উপকার পাবেন। এছাড়াও রাখতে পারেন ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত অন্যান্য মাছও।
অলিভ অয়েল
খাবারের তালিকায় নিয়মিত অলিভ অয়েল রাখলে মিলবে অনেক উপকার। এই তেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে এটি বজায় রাখে লিভারের কার্যকারিতাও। অলিভ অয়েলে ক্ষতিকর ফ্যাট নেই। তাই প্রতিদিন পরিমিত অলিভ অয়েল খেলে তা আপনার লিভারকে সুস্থ রাখতে কাজ করবে।
ব্রকোলি
বিদেশি সবজি হলেও দেশি সবজির পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছে ব্রকোলি। সবুজ রঙের এই সবজি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে থাকে ক্যানসার প্রতিরোধ করার মতো বিভিন্ন উপাদান। এই সবজি নিয়মিত খেলে লিভার সুস্থ থাকে। সেদ্ধ ব্রকোলি বা এর স্যুপ খেলে উপকার পাবেন।
বাদাম
ক্ষুধা পেলে একমুঠো বাদাম খাওয়ার অভ্যাস থাকে অনেকেরই। তাই বলে মুঠো মুঠো খাবেন না যেন! কারণ কোনো খাবারই অতিরিক্ত খেলে তা আর উপকারী থাকে না। সব ধরনের বাদামই অল্প করে খেতে পারেন প্রতিদিন। এতে শরীরে অনেক ধরনের উপকার মিলবে। কারণ এতে থাকে ভিটামিন ই, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদি। এসব উপাদান লিভার ভালো রাখতে কাজ করে।
গ্রিন টি
প্রতিদিন এক কাপ গ্রিন টি পান করতে পারেন। কারণ এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে। সেই সঙ্গে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ দূর করতেও সাহায্য করে। ফলে ভালো থাকে আমাদের লিভার। উপকারী বলে খুব বেশি খাবেন না, দিনে এক কাপ পান করাই যথেষ্ট।
Pingback: জরায়ু ঘা হলে করনীয় - Sahojinfo