পেটের সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং খারাপ খাদ্যাভ্যাসের কারণে ধীরে ধীরে আমাদের পরিপাকতন্ত্র দুর্বল হয়ে যায়। এ কারণে অনেকেই বদহজম, অ্যাসিডিটিসহ বিভিন্ন রকম পেটের সমস্যায় ভোগেন।
দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়
গ্যাসের সমস্যার কারণে পেট অনেক সময় ফুলে থাকে। এর মানে হলো অন্ত্র ও পেটে গ্যাস জমা হয়েছে। বাইরে থেকে বিভিন্ন রকমের ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া, মদ্যপান করা ও ধূমপানের কারণেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদহজমের মতো সমস্যা হতে পারে।
কথায় আছে, ‘পেট ঠান্ডা তো দুনিয়া ঠান্ডা।’ তাই পেটের যদি সমস্যা থাকে, তাহলে কোনো কাজ করেই শান্তি পাওয়া যায় না। পেটের সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এ ছাড়া চাইলে ঘরোয়া উপায়ে এ সমস্যা দূর করা সম্ভব।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে কীভাবে পেটের গ্যাস দূর করবেন
পেটে ম্যাসাজ করা: পেটের উপরিভাগে ম্যাসাজ করতে হবে। এতে গ্যাস অন্ত্রের নিচের দিকে চলে আসবে এবং পায়ুদ্বারের মাধ্যমে বেরিয়ে যাবে। এ জন্য ডান হাতটিকে ডানদিকে বুকের খাঁচার হাড়ের নিচের দিকে ধরুন। এরপর গোলভাবে ম্যাসাজ করুন। ফলে গ্যাসের সমস্যা দ্রুত কমে যাবে।
গরম পানিতে গোসল করা: পেটের সমস্যা সমাধানের জন্য গরম পানির গোসল হতে পারে অন্যতম কার্যকর উপায়। দেখা গেছে, গরম পানি পেটে ব্যথা কমাতে পারে। সেই সঙ্গে দূর করতে পারে গ্যাসের সমস্যাও। এমনকি পেটে গ্যাসও হতে দেয় না। এ ছাড়া গরম পানি দিয়ে গোসল করলে অন্ত্রের ওপর চাপ কমে। এতে অন্ত্র ভালো থাকে।
ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া: পেটের সমস্যায় খাবারের তালিকায় অবশ্যই বেশি বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার যোগ করুন। এতে সমস্যা অনেকটাই কমে যেতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে দিনে ২৫ ও পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩৮ গ্রাম ফাইবার খাওয়া উচিত। সবজি ও হোল গ্রেইনে অনেকটা বেশি পরিমাণে ফাইবার থাকে।
আরও পড়ুন: দাঁতের মাড়িতে ক্যান্সারের লক্ষণ
কলা খাওয়া: এমন অনেক খাবার রয়েছে, যেগুলো পেটের সমস্যা একদম কমিয়ে দিতে পারে। এসব খাবার মূলত সমস্যা হওয়ার সময় খেতে হয়, এর মধ্যে একটি হলো কলা। যা খেলে গ্যাসের সমস্যা অনেকটা কমে যায়।
পর্যাপ্ত পানি খাওয়া: পেটের গ্যাসের সমস্যা সমাধানে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এতে করে পেটের ভেতর থেকে গ্যাস বের হয়ে যায়। এর পাশাপাশি গ্রিন টি খেতে পারেন। এর ফলে পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
হাঁটা ও ব্যায়াম করা: নিয়মিত হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়াম করলে পেটে গ্যাসের সমস্যা অনায়াসে কমে আসে। এমনকি অন্ত্র ঠিকমতো কাজ করতে পারে। এতে করে পেট থেকে গ্যাস বেরিয়ে যেতে থাকে। এ ছাড়া ব্যায়াম করলে নিজেকে অনেকটা হালকা মনে হয়।
এছাড়া কয়েকটি জিনিস পেটের গ্যাসের সমস্যা সমাধানে দারুণভাবে কাজ করে। সেগুলো হলো—
ডাবের পানি: ডাবের পানি খেলে পেটে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়। কারণ, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সেই সঙ্গে এতে উপকারী মিনারেলসও পাওয়া যায়।
রসুন: পরিপাকতন্ত্রের জন্য উপকারী উপাদান হলো রসুন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন খেতে পারেন। এ ছাড়া দুপুরে ভাতের সঙ্গেও এক কোয়া রসুন খেতে পারেন। এভাবে সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন খান; সমস্যা অনেকটা সমাধান হয়ে যাবে।
তুলসী পাতা: তুলসী পাতা পাকস্থলিতে শ্লেষ্মার মতো পদার্থ উৎপাদন বাড়াতে উদ্দীপনা যোগায়। এর রয়েছে শীতলীকরণ এবং বায়ুনাশক উপাদান যা গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডের কার্যকারিতা কমাতে সহায়ক। গ্যাসের সমস্যা হলেই ৫-৬টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন। অথবা ৩-৪টি তুলসী পাতা সেদ্ধ করে পানিটুকু মধু দিয়ে পান করুন।
দারচিনি: বেশিরভাগ হজমজনিত সমস্যার ওষুধ দারচিনি। এতে আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড যা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায় এবং শোষণক্রিয়াকে শক্তিশালী করে। আধা চা চামচ দারচিনি গুঁড়ো এক কাপ পানিতে মিশিয়ে সেদ্ধ করে নিন। এরপর ঠান্ডা করে পান করুন। প্রতিদিন এভাবে তিনবার দারচিনি জুস পান করুন।
পুদিনা পাতা: অ্যাসিড নিঃসরণের গতি কমায় এবং হজম ক্ষমতা বাড়ায় পুদিনা পাতা। এই পাতার একটি শীতলীকরণ প্রভাবও আছে, যা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যথা এবং জ্বালাপোড়া কমায়। কয়েকটি পুদিনা পাতা কুচি কুচি করে একটি পাত্রে পানি নিয়ে সেদ্ধ করে নিন। এরপর পানিটুকু ছেঁকে ঠান্ডা করে পান করুন।
আরও পড়ুন: মেয়েদের ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট
এলাচ: এলাচ হজম ক্ষমতা বাড়াতে এবং পাকস্থলির খিঁচুনি দূর করতে সহায়ক। এটি অতিরিক্ত অ্যাসিড নিঃসরণের কুপ্রভাব দূর করে। দুটি এলাচ গুঁড়ো করে পানিতে সেদ্ধ করে পানিটুকু পান করে নিন।
অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরায় উপস্থিত নানাবিধ খনিজ একদিকে যেমন ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি হজম ক্ষমতার উন্নতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, অ্যালোভেরার উপাদান পেটে তৈরি হওয়া অ্যাসিডের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ফলে অ্যাসিডিটির সমস্যা একেবারে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
পাশাপাশি পেটে গ্যাসের সমস্যা সমাধানে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। সেগুলো হলো—
- অতিরিক্ত মসলাজাতীয় খাবার খেলে পেটে সমস্যা হতে পারে। তাই এসব খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। আর বাইরে খেলে ঝোলজাতীয় খাবার ত্যাগ করুন। সব সময় খাবারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
- অনেক সময় অতিরিক্ত প্রোটিন খেলে গ্যাসের সমস্যা হয়। তাই যতটুকু প্রয়োজন তার চেয়ে অতিরিক্ত মাছ-মাংস, দুধ না খাওয়াই ভালো হবে।
- নিয়মিত শারীরিক চর্চা করুন। এতে পেটে গ্যাস জমার প্রবণতা কমবে। একই সঙ্গে পেটের পেশির ব্যাयाম করলেও উপকার পাওয়া যাবে।