দাঁতের মাড়িতে ক্যান্সারের লক্ষণ

দাঁতের মাড়িতে ক্যান্সারের লক্ষণ

সচরাচর দাঁতের মাড়িতে ঘা বা ব্যথা হলে খুব একটা পাত্তা দেওয়া হয় না। সাধারণত এগুলো সামান্য যত্নেই সেরে ওঠে। তবে, এটাকে হেলাফেলা করার কোনো সুযোগ নেই। দাঁতের মাড়িতে ব্যথা বা মুখের মধ্যে ঘা অনেক সময় ক্যানসারেরও পূর্বাভাস।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছে

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাথা থেকে ঘাড়; এই অংশের মধ্যে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা দেহের অন্যান্য অংশের চেয়ে কম। তবে, বিরল হলেও দাঁতের মাড়ি, মুখ, গলা, কণ্ঠনালী, লালাগ্রন্থি, নাকের গর্ত এবং সাইনাস ক্যানসার হওয়ার পরিসংখ্যান কম নয়।

আমেরিকান সোসাইটি ফর ক্লিনিকাল অনকোলজির তথ্যানুসারে, বিশ্বে প্রায় ৩ লাখ ৫৫ হাজার জন এ রোগে আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করে প্রায় ১ লাখ ৭৭ হাজার রোগী। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগ শনাক্ত করতে পারলে নিরাময় করাও সম্ভব হয়।

আমেরিকার ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের এক রিপোর্টে দেখা যায়, প্রায় ৬০ শতাংশ মুখের ক্যানসার রোগী পাঁচ বছর বা এরও বেশি সময় বেঁচে থাকেন। যত দ্রুত ক্যানসার শনাক্ত করা যায়, চিকিৎসার পর রোগীর দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা তত বেশি। এমনকি স্টেজ-১ এবং স্টেজ-২ এর রোগীদের ক্ষেত্রে এই হার (৭০–৯০) শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

মুখের ক্যানসারের মধ্যে যেসব ক্যানসারগুলো বেশি দেখা যায়—

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরে অন্তত দুবার দাঁত ও এর আশপাশের অঞ্চল পরীক্ষা করানো জরুরি। এতে করে যে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা ডেন্টিস্টের কাছে ধরা পড়ে। ফলে ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে তা অনেক সময় সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব হয়।

বিশেষজ্ঞরা মুখের ক্যানসারের মধ্যে সাধারণ মাড়িতে, ঠোঁটে, জিহ্বায়, মুখের তালু ও গালের ভেতরের অংশে দেখা যায় বলে জানান।

মুখের ক্যানসার হওয়ার কারণ

বিশেষজ্ঞরা মুখে ক্যানসার হওয়ার অন্যতম বড় কারণ হিসেবে দেখছেন তামাক গ্রহণ করা। সেটা হতে পারে সিগারেট, চুরুট, গুল বা জর্দার মাধ্যমে। এ ছাড়াও যারা নিয়মিত মদ্যপান করে থাকে তারাও এই রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের চেয়ে পুরুষদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা প্রায় দ্বিগুণ।

আরও পড়ুন: দ্রুত ব্রণ দূর করার উপায়

মুখের ক্যান্সারের যেসব লক্ষণ দেখা দেয়-

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সারের লক্ষণগুলোর ক্ষেত্রে প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে মুখের যেকোনো অংশ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যাচ্ছে কি না। আবার মুখের কোনো অংশে ঘা বা একটি ছোট পিণ্ডের মতো কিছু অনুভূত হওয়া, সাদাটে বা লাল হয়ে যাওয়া কিংবা রঙ পরিবর্তন হওয়া মুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সারের লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম। আবার অনেক সময় মুখের ভেতরের সেই নির্দিষ্ট স্থানে হাত দিয়ে পরীক্ষা করলে দেখা যায়, সে স্থানটি খসখসে অনুভূত হচ্ছে।

অনেক ক্ষেত্রে মাড়ির কোনো অংশ থেকে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ, মাড়ি নিচের দিকে দেবে যাওয়া কিংবা অস্বাভাবিকভাবে ফুলে উঠতে পারে। এই ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যথা থাকে না। ঘা বেড়ে গেলে মুখে অস্বাভাবিক রকম বেশি লালা তৈরি হওয়া, মুখের ‘হাঁ’ ছোট হয়ে যাওয়া, জিহ্বা নাড়তে কষ্ট হওয়া এবং খেতে কষ্ট হতে পারে।

এ ছাড়াও ঠোঁট, মুখ, গলা বা গালে অবশতা অনুভূত হওয়া, দাঁত পড়ে যাওয়া, জিহ্বায় ব্যথা, চোয়ালে ব্যথা বা অবশতা, কানে ব্যথা অনুভূত হওয়া, ওজন অল্প সময়ের মধ্যে অনেকখানি কমে যাওয়াও ক্যান্সারের লক্ষণ।

মুখের ক্যান্সারের যেসব পরীক্ষা

ক্যান্সার ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। মুখের ক্যান্সারের তাৎক্ষণিক অবস্থা জানতে চিকিৎসকরা সাধারণত নিম্নোক্ত পরীক্ষাগুলো করিয়ে থাকেন।

  • এক্সরে: মুখমণ্ডল, বুকে বা ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়েছে কি না সেটা দেখার জন্য। # সিটি স্ক্যান: মুখ, ঠোঁট, গলা বা ফুসফুসের কোথাও কোনো টিউমারের উপস্থিতি বোঝার জন্য। # এমআরআই স্ক্যান: ক্যান্সারের স্টেজ এবং মুখ ও গলার প্রকৃত অবস্থা বোঝার জন্য।

আরও পড়ুন: দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়

মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে এর ধরন, অবস্থান, স্টেজ—সবকিছুর ওপর। প্রাথমিক স্টেজে ধরা পড়লে অনেক সময় খুব বেশি সময় লাগে না। যদিও সেক্ষেত্রে রোগীর বয়সও অনেক বড় একটি ফ্যাক্টর।

  • সার্জারি: চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত সার্জারির মাধ্যমে টিউমার বা কার্সিনোজেনিক লিম্ফ নোড অপসারণ করা হয়। পাশাপাশি মুখ ও গলার আশপাশের টিস্যুও নেওয়া হয় অনেক সময়।
  • রেডিয়েশন থেরাপি: রেডিয়েশন থেরাপি এই চিকিৎসার আরেকটি অপশন। সপ্তাহে দুদিন বা পাঁচদিন করে দুই সপ্তাহ থেকে আট সপ্তাহ পর্যন্ত এই থেরাপি চলতে পারে। ক্যান্সার ‘অ্যাডভান্সড স্টেজ’-এর হলে রেডিয়েশন থেরাপির সঙ্গে কেমোথেরাপিও প্রয়োজন হতে পারে।

ক্যান্সার থেকে পরিত্রাণ পেতে করণীয়

পান, সুপারি, জর্দা এবং ধূমপানই মুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সারের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। আবার পুষ্টিহীনতা এবং মুখের অভ্যন্তরের অনুপযুক্ত পরিবেশও এ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়াও অপরিচ্ছন্নতার কারণেও এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই পান, সুপারি, তামাক বা এ জাতীয় দ্রব্য সেবনের বদভ্যাস ত্যাগ করে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ ও অন্যান্য সুঅভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

এ ছাড়া প্রতিদিন দুবেলা যত্নসহকারে দাঁত মেজে পরিষ্কারের মাধ্যমে এ রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়।

2 Comments

Comments are closed