ছারপোকা, বিছানা বাগ, রক্ত চোষা পোকা, সত্যিই বিরক্তিকর. যখন আপনার বাড়িতে আক্রমণ করা হয়, তখন উদ্বেগ সীমাহীন। তারা রক্ত খায় এবং আপনার রাতের ঘুম ব্যাহত করে।
বেড বাগ অন্যান্য উষ্ণ রক্তের প্রাণীদের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। তারা বিছানা, মশারি এবং বালিশের প্রান্তে বাসা বাঁধে, তবে ট্রেন বা বাসের সিটেও পাওয়া যায়। যদিও তারা বেড বাগ, তাদের প্রিয় আবাসস্থল হল গদি, সোফা এবং অন্যান্য আসবাবপত্র। যদিও এরা পুরোপুরি নিশাচর নয়, বেড বাগগুলি সাধারণত রাতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে এবং মানুষের দ্বারা সনাক্ত না করে রক্ত চুষে খায়। তারা মশার মতো ছোট ছোট কামড় তৈরি করে জায়গা ছেড়ে দেয়। এর মানে এই নয় যে তারা দিনের বেলা চুলকায় না।
তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে সহজেই আপনার বাড়ি থেকে এই বিরক্তিকর এবং অস্বস্তিকর পোকা দূর করবেন।
ছারপোকা তাড়ানোর উপায় কি
বেড বাগ থেকে পরিত্রাণ পেতে, নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করা, বিছানা রোদে বের করা এবং গরম জলে কাপড় ধোয়া কার্যকর পদ্ধতি, যেমন স্যাভলন বা ডেটল স্প্রে, মথবল, ল্যাভেন্ডার তেল, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ইত্যাদি।
বিছানা রোদে দিন
বিছানার তোষক এবং বালিশে ছারপোকার উপদ্রব বেশি দেখা যায়। ছারপোকা থেকে মুক্তি পেতে বিছানা, তোশক, বালিশ নিয়মিত রোদে দিন, চাদর পরিবর্তন করুন এবং খাট দেয়াল থেকে একটু দূরে রাখুন।
কাঠের ফার্নিচার রোদে দিন
কাঠের ফার্নিচারের ফাঁকফোকর ছারপোকার আদর্শ আশ্রয়স্থল। তাই কাঠের আসবাবপত্রকে ভালো করে রোদে দিলে ছারপোকার উপদ্রব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। গরমের তাপে ছারপোকা ও ডিম দুইই ধ্বংস হয়ে যায়। ছারপোকা তাপ সহ্য করতে পারে না।
তবে শুধুমাত্র একদিন রোদে দিলে হবে না। নিয়মিত কয়েকদিন রোদে দিতে হবে। এরপর ভালোভাবে ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করে ঘরে তুলতে হবে।
ফার্নিচারের কিনারা, ফাঁক-ফোকর, ফাটল, ছিদ্রের মাঝে ছারপোকা বা এর ডিম থেকে যেতে পারে। তাই এগুলো মোম দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে।
তাছাড়া, ছারপোকার ডিম নষ্ট করার উপায় হচ্ছে বিছানাপত্র বা ফর্নিচার কড়া রোদে ১ ঘন্টা রাখতে হবে।
ন্যাপথলিন
ন্যাপথলিনের গুঁড়ো ছারপোকার আশ্রয়স্থলে ছিটিয়ে দিন। বিছানার কাপড়ের ভাঁজে, তোষকে কয়েকটি ন্যাপথলিন রেখে দিন। ন্যাপথলিনের তীব্র গন্ধ ছারপোকা কে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
ন্যাপথলিন শিশু এবং পোষা প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। তাই এটি ব্যবহারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন।
পরিচ্ছন্নতা
ঘর নিয়মিত পরিষ্কার করুন, বিশেষ করে বিছানা, সোফা ইত্যাদি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ছারপোকার বংশবিস্তার রোধ করে। সাধারণত অপরিচ্ছন্নতাকে ছারপোকা আগমনের প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়। তাই যথাসম্ভব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে ছারপোকা অনেকাংশে কমানো যায়।
ছারপোকার আবাসস্থল ধ্বংস করা
ছারপোকা মারার পাশাপাশি তাদের আবাসস্থল খুঁজে বের করে সেখানে থাকা ডিম গুলো কীটনাশক স্প্রে করে নষ্ট করে দিতে হবে। কারণ, ডিম থেকে নতুন ছারপোকা জন্ম নিবে এবং আবার উপদ্রব শুরু হবে।
গরম পানিতে কাপড় পরিস্কার
ছারপোকা ১১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মারা যায়। তাই বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কাঁথা ইত্যাদি ফুটন্ত গরম পানিতে ডিটারজেন্ট সহকারে ১ ঘন্টার ধরে ডুবিয়ে রাখুন। উচ্চ তাপমাত্রার পানি ছারপোকার ডিম এবং পোকা মারতে সাহায্য করে।
লাভেন্ডার অয়েল
ছারপোকা মারার জন্য আক্রান্ত স্থানে ল্যাভেন্ডার অয়েল স্প্রে করুন। ল্যাভেন্ডার অয়েলের সুগন্ধ ছারপোকা পছন্দ করে না। এটি ছারপোকা কে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
অ্যালকোহল
অ্যালকোহল ছারপোকা কে মারতে পারে। যেখানে ছাড়পোকা দেখতে পাবেন, সেখানে অ্যালকোহল স্প্রে করুন।
কেরোসিন
আসবাবপত্রে মাঝে মধ্যে কেরোসিনের প্রলেপ দিন। কেরোসিনের তীব্র গন্ধ ছারপোকা কে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
শিম পাতা দিয়ে ছারপোকা ধরা
শিম গাছের পাতার উপর অতি সূক্ষ্ম রোম থাকে। এই রোমে ছারপোকার পা আটকে যায়। ছারপোকা আক্রান্ত জায়গায় এই পাতা ছড়িয়ে দিলে, ছারপোকা গুলো আটকে পড়ে এবং তাদের পুড়িয়ে ফেললে ছারপোকার সংখ্যা কমে।
নিমপাতা
ছারপোকার উপদ্রব দূর করতে বিছানা, সোফা ইত্যাদি জায়গায় নিম পাতা কুচি ছিটিয়ে রাখুন। নিমপাতার গন্ধ ছারপোকা কে তাড়িয়ে দেয়।
ছাড়পোকা মারার ঔষধ
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ছারপোকা মারার ওষুধ পাওয়া যায়। ছারপোকা মারার বিষ গুলো সাধারণত স্প্রে, পাউডার এবং ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়। ঘরোয়া উপায়ে ছাড়পোকা তাড়াতে না পারলে এসব কেমিক্যাল ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন।
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে বিছানা, সোফা এসব থেকে ছারপোকা ও ছারপোকার ডিম গুলোকে তুলে নিতে পারেন সহজে।
ছারপোকার ডিম নষ্ট করার উপায়
ছাড়পোকার ডিম নষ্ট করার জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে, ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি গরম পানি দিয়ে বিছানার চাদর, বালিশের কভার ও কাপড়-চোপড় ধুয়ে নিন। তাছাড়া, গদি, বেডিং বা আসবাবপত্র Steam Cleaner অথবা Vaccuum Cleaner দিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন।
এগুলো সম্ভব না হলে, কড়া রোদে কয়েকঘন্টার জন্য সোফার গদি, বেডিং বা আসবাবপত্র রাখুন। এতে রোদের তাপে ছারপোকার ডিম নষ্ট হয়ে যাবে।
ছারপোকা মারার ঔষধের নাম
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ছারপোকা মারার ওষুধ পাওয়া যায়। ছারপোকা দমনের ঔষধগুলো সাধারণত স্প্রে, পাউডার এবং ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়।
ছারপোকা মারার স্প্রে
২৫০ গ্রাম পানিতে ৪ চা চামচ স্যাভলন বা ডেটল মিশিয়ে একটি স্প্রে বোতলে ভরে নিন। এই মিশ্রণটি ছারপোকার আশ্রয়স্থল যেমন বিছানা, সোফা, বালিশ, তোষকে স্প্রে করুন। স্যাভলন বা ডেটলের জীবাণুনাশক উপাদান ছারপোকা মারতে সাহায্য করে।
ছারপোকা মারার পাউডার
ছারপোকা মারার পাউডার একটি পাউডারের নাম হলো ZoomX এটি ১০ দিন পর পর ছারপোকার উপদ্রব স্থানে ছড়িয়ে দিতে হবে।
যদিও বলা হয়ে থাকে ছারপোকা মারার এ পাউডার এর কার্যকারিতা অনেক এবং বিষাক্ততা কম। যার ফলে শিশু ও পোষা প্রাণীদের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তবুও মনে রাখতে হবে এটি এক প্রকার বিষ। তাই বাড়িতে ছোট বাচ্চা, প্রাণী থাকলে অতি সাবধানতার সাথে ব্যবহার করতে হয়।
বিছানায় ছারপোকা কেন হয়?
বিছনায় ছারপোকা হওয়ার কয়েকটি কারণ হতে পারে:
- দূষিত জিনিসপত্র: যদি আপনি কোনো দূষিত জিনিসপত্র বা আসবাবপত্র ঘরে আনেন, তাহলে ছারপোকা আপনার ঘরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
যাতায়াত: যদি আপনি কোনো ছারপোকা আক্রান্ত হোটেল বা অন্য কোনো জায়গায় যান, তাহলে আপনার কাপড়চোপড়ের মাধ্যমে ছারপোকা আপনার ঘরে আসতে পারে। - পুরানো বা ব্যবহৃত জিনিস: পুরানো বা ব্যবহৃত বিছানা, গাদি ইত্যাদি কিনলে সেগুলোতে ছারপোকা থাকার সম্ভাবনা থাকে।
- অপরিষ্কার পরিবেশ: যদি আপনার ঘর পরিষ্কার না থাকে, তাহলে ছারপোকার বংশবিস্তারের জন্য এটি একটি আদর্শ পরিবেশ হয়ে উঠতে পারে। অপরিষ্কার পরিবেশ থেকে ছারপোকা সৃষ্টি হয়।
ছারপোকা কামড়ালে কি হয়
সাধারণত ছারপোকা কামড়ালে চুলকায় এবং দাগ হয়ে কিছুটা ক্ষত হয়ে যায় এবং কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যায়। তবে অ্যালার্জি থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কেননা কিছু ক্ষেত্রে এটি এলার্জির সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিতে পারে।
ছারপোকা সাধারণত রোগ ছড়ায় না, তবে ঘুম ও ত্বকের সমস্যা করে। ছারপোকার কামড়ালে ব্যক্তি ভেদে ত্বকের প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
